আদিত্য এল ১ (Aditya L1) :ভারতের প্রথম সূর্য অভিযান (ISRO)
সূর্য সৌরজগতের নিকটতম এবং বৃহত্তম নক্ষত্র। এটি হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাসের একটি জ্বলন্ত বল। সূর্যের আনুমানিক বয়স প্রায় 4.5 বিলিয়ন বছর। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় 150 মিলিয়ন কিলোমিটার।
এটি আমাদের সৌরজগতের শক্তির উৎস। আমরা জানি সৌরশক্তি ব্যতীত পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ সৌরজগতের সমস্ত বস্তুকে একত্রে ধরে রাখে।
সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের (কোর) তাপমাত্রা 15 মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এই তাপমাত্রায় নিউক্লিয় সংযোজন বা নিউক্লিয়ার ফিউশন নামক একটি প্রক্রিয়া সূর্যের কেন্দ্রে হতে থাকে যা সূর্যকে শক্তি দেয়। আলোকমণ্ডল নামে পরিচিত সূর্যের দৃশ্যমান পৃষ্ঠটি তুলনামূলকভাবে শীতল এবং এর তাপমাত্রা প্রায় 5,500 ডিগ্রি সেলসিয়াস।
Table of Contents
কেন সূর্য অধ্যয়ন?
পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র বা তারা হল সূর্য । তাই অন্যান্য তারার তুলনায় অনেক বিষয়ে বিস্তারিত অধ্যয়ন করা যায়।
সূর্য সম্বন্ধে জানার মাধ্যমেই আমরা আমাদের আকাশগঙ্গার (Milky Way) নক্ষত্রের পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন ছায়াপথের নক্ষত্র সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে পারি।
সূর্য একটি খুব গতিশীল নক্ষত্র। আমরা যা দেখি তার চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল। এটি বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণমূলক ঘটনা দেখায় এবং সৌরজগতে প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত করে। যদি এই ধরণের বিস্ফোরক সৌর ঘটনা পৃথিবীর দিকে পরিচালিত হয়, তাহলে এটি পৃথিবীর নিকটবর্তী মহাকাশ পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
বিভিন্ন মহাকাশযান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর এই ধরনের ঝামেলার প্রবণতা রয়েছে। তাই আগে থেকেই সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এই ধরনের ঘটনাগুলির একটি প্রাথমিক সতর্কতা গুরুত্বপূর্ণ।
এগুলি ছাড়াও যদি কোনো মহাকাশচারী সরাসরি এই ধরনের বিস্ফোরক ঘটনার সামনে পড়েন, তবে তিনি বিপদে পড়বেন।
সূর্যের উপর বিভিন্ন তাপীয় এবং চৌম্বকীয় ঘটনা চরম প্রকৃতির। এই ঘটনাগুলি পরীক্ষাগারে সরাসরি অধ্যয়ন করা যায় না। সেই ঘটনাগুলি বোঝার জন্য সূর্য একটি ভাল প্রাকৃতিক পরীক্ষাগারও।
মহাকাশের আবহাওয়া
সূর্য ক্রমাগত নিজের বিকিরণ, তাপ, কণা এবং চৌম্বকক্ষেত্রের স্থির প্রবাহ দ্বারা পৃথিবীকে প্রভাবিত করে। সূর্য থেকে কণার স্থির প্রবাহ সৌর বায়ু (Solar Wind) নামে পরিচিত। এটি উচ্চ শক্তির প্রোটন দ্বারা গঠিত।
সৌরজগতের প্রায় সমস্ত স্থান সৌর বায়ু পূরণ করে। সৌর বায়ুর পাশাপাশি সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রও সৌরজগতকে পূর্ণ করে। সৌর বায়ু এবং অন্যান্য বিস্ফোরক সৌর ঘটনা যেমন করোনাল মাস ইজেকশন (CME) মহাকাশের প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে।
এই ধরণের ঘটনার সময় গ্রহের কাছাকাছি চৌম্বকক্ষেত্র এবং আধানযুক্ত কণা দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশের পরিবর্তন হয়।
পৃথিবীর ক্ষেত্রে CME এর চৌম্বকক্ষেত্র পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে মিথস্ক্রিয়ায় পৃথিবীর কাছাকাছি একটি চৌম্বকীয় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এই ধরনের ঘটনায় মহাকাশের সম্পদ প্রভাবিত করতে পারে।
মহাকাশের আবহাওয়া বলতে পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহের আশেপাশে মহাকাশে পরিবেশগত অবস্থার পরিবর্তনকে বোঝায়। মহাকাশে আরও বেশি বেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় মহাকাশের আবহাওয়া বোঝার জন্য।
সোলার মিশন (Solar Mission)
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন অর্থাৎ ইসরো (ISRO) সোমবার ২৮ অগস্ট জানিয়েছে তাদের সোলার মিশন (Solar Mission) শুরু হতে চলেছে আগামী ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩। এর আগে সূর্যকে আরও কাছ থেকে চেনার জন্য পার্কার মিশন চালু করেছিল NASA। কিন্তু, এবার ISRO সেই উদ্যোগ নিয়েছে।
সোলার মিশন এর লক্ষ্য
- পৃথিবীর আবহাওয়ার উপর সূর্য ঠিক কী প্রভাব বিস্তার করে তা জানা।
- সূর্যের আবহাওয়া-পরিবেশ অর্থাৎ সোলার অ্যাটমোস্ফিয়ার ভালভাবে পর্যবেক্ষণ।
- ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং সূর্যের একদম বাইরের লেয়ার বা আস্তরণগুলি পর্যবেক্ষণ। একেই বলা হয় সোলার করোনা।
- সৌর বায়ু বিশ্লেষণ করা।
ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট
দুটি বৃহদাকার বস্তুর মহাকর্ষীয় সিস্টেমের জন্য, ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টগুলি হল মহাকাশের একটি অবস্থান যেখানে একটি ছোট বস্তু রাখলে সেখানেই থেকে যাবে। সূর্য-পৃথিবীর সিস্টেমের জন্য মহাকাশের এই পয়েন্টগুলিতে মহাকাশযান রাখা হয়। এই অবস্থানে থাকার জন্য কম জ্বালানী খরচ হয়।
গণিতজ্ঞ জোসেফ লুই ল্যাগ্রেঞ্জ প্রথম মহাকাশে এল ১ পয়েন্ট আবিষ্কার করেছিলেন।
আদিত্য এল ১ (Aditya L1)
আদিত্য এল ১ হল প্রথম মহাকাশযান যা ভারতীয় প্রথম সূর্য অভিযানের মাধ্যমে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে। এটি পাঠাচ্ছে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন অর্থাৎ ইসরো (ISRO)।
মহাকাশযানটিকে সূর্য-পৃথিবী সিস্টেমের ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১ (L1) এর চারপাশে একটি হ্যালো কক্ষপথে স্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিমি দূরে।
L১ পয়েন্টের চারপাশে হ্যালো কক্ষপথে স্থাপিত একটি স্যাটেলাইটের প্রধান সুবিধা রয়েছে সূর্যকে অবিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুবিধা।
এটি ক্রমাগত সৌর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করবে। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এবং পার্টিকেল ডিটেক্টর ব্যবহার করে আলোকমণ্ডল, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং সূর্যের বাইরের স্তর (করোনা) পর্যবেক্ষণ করতে মহাকাশযানটি সাতটি পেলোড বহন করে।
কবে আদিত্য এল ১ লঞ্চ করা হবে?
আগামী ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে আদিত্য এল ১। এদিন সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে যাত্রা শুরু করবে ভারতের মহাকাশযান।
কী ভাবে লঞ্চ করা হবে আদিত্য এল ১?
এই মহাকাশযানকে পৃথিবীর বাইরে পাঠানোর জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে চলেছে PSLV-C57 রকেট। শ্রীহরিকোটার দ্বিতীয় লঞ্চ প্যাড থেকে এই মহাকাশযান সংশ্লিষ্ট রকেটের পিঠে চড়েই রওনা দেবে সূর্যের দিকে। এটি ভারতের অন্যতম শক্তিশালী রকেট।
আদিত্য এল ১-এর গন্তব্য
মহাকাশযানটিকে সূর্য-পৃথিবী সিস্টেমের ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১ (L1)। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে দুটি শক্তি এক্ষেত্রে সূর্য এবং পৃথিবীর মহাকর্ষীয় শক্তি একে অপরকে প্রতিহত করে। আর সেই জন্য এই জায়গাটিই আদিত্য এল ১-এর ল্যান্ডিং এবং স্থায়িত্বের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।
আদিত্য এল-১ অভিযানে এল-১- এর চারপাশে থাকা কক্ষপথ থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে মহাকাশযান।
কত পথ অতিক্রম করবে আদিত্য এল ১?
১২৭ দিন ধরে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে গন্তব্য অর্থাৎ এল ১ পয়েন্টে পৌঁছবে ISRO-র আদিত্য এল ১। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার পথ তাকে অতিক্রম করতে হবে। আর এই পথে ছবিও পাঠাতে সক্ষম হবে আদিত্য এল ১।
Read More :
২০০০ টাকার নোট কি অচল ? – জানুন বিস্তারিত
আরও আপডেট পেতে আমাদের সঙ্গী হও